Description: কলকাতার মায়ারঞ্জু ছেদন করেছিল জয়ন্ত ও মানিক। বাসা বেঁধেছিল তারা পুরীর সমুদ্রতটে, একেবারে এক দিকের শেষ বাড়িতে। সেখানে মানুষের আনাগোনা খুব কম, চোখ খুললেই দেখা যায় কেবল নীল সাগরের তরঙ্গের পর তরঙ্গ সাদা ফেনার মালা পরে সুদীর্ঘ সৈকতের উপরে ভেঙে পড়ছে আর পড়ছে আর পড়ছে– ভেঙে পড়ছে অহরহ, কিবা রাত কিবা দিন! সূর্য এসে চন্দ্র এসে সেই সদাচঞ্চল চলচ্চিত্রের উপরে মাখিয়ে দিয়ে যায় সোনালি-রূপোলি আলোর পালিশ। আরও দূরে নজর চালিয়ে যাও, পাবে কেবল নিস্তরঙ্গ, নিশ্চেষ্ট নীলিমার অসীমতা এবং সর্বক্ষণই মুগ্ধ চোখে ওই দেখতে দেখতে তৃপ্ত শ্রবণে শুনতে পাবে তুমি সেই রোমাঞ্চকর, সুগম্ভীর মহাসঙ্গীত, পৃথিবীতে মনুষ্য সৃষ্টিরও লক্ষ লক্ষ বৎসর আগে থেকে মহাসাগর প্রত্যহই যা গেয়ে আসছে বিপুলোৎসাহে। নিশ্চিন্ত আলস্যের ভিতর দিয়ে শুয়ে, গড়িয়ে স্বপন দেখে পরম সুখে বেশ কেটে যাচ্ছিল দিনের পর দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সাগর-সৈকতে পদচারণ, বালুকাশয্যা থেকে সাগরতরঙ্গের দেওয়া বিচিত্র উপহার সংগ্রহ, দুপুরে সমুদ্রের নীল জলে ডুবে এবং ভেসে এবং সাঁতার কেটে অবগাহন, বৈকালে নুলিয়াদের ডিঙায় চেপে সাগর ভ্রমণ এবং রাত্রে সমুদ্রের নৃত্যশীল বীচিমালার উপরে হিরার গুঁড়ো ছড়িয়ে জ্যোত্সার লীলা দর্শন। কলকাতার কথা তাদের মনেও পড়ত না। কিন্তু আচম্বিতে কলকাতা একদিন জানিয়ে দিলে নিজের অস্তিত্ব। নগর ত্যাগ করে জনতার নাগালের বাইরে পলায়ন করলেও নাগরিকদের মুক্তি দেয় না নগরের নাগপাশ।
Golpokhuro App
Listen to Complete Audiobooks