Description: ইচু মণ্ডলের আজ বেজায় সর্দি হয়েছে। ভাদ্রমাসের বর্ষণমুখর শীতল প্রভাত। তালি দেওয়া কাঁথা, ওর বউ, তার নাম নিমি, শেষরাত্রে গায়ে দিয়ে দিয়েছিল। এমন সর্দি হয়েছে যেন মনে হচ্ছে সমস্ত শরীর ভারী। ইচু শুয়েই পা দিয়ে চালের হাঁড়িটা নেড়ে দেখলে, সেটা ওর পায়ের তলার দিকেই থাকে, হাঁড়িটাতে সামান্য কিছু চাল আছে মনে হল তার। ইচু বললে—আজ আর জনে যাব না। একটু পানি দে দিকি। ওর বউ বললে—জনে যাবে না তবে চলবে কিসি? —কেন, চাল তো রয়েছে তোর হাঁড়িতি, সজনে শাক-মাক সেদ্দ কর আর ভাত। নুন আছে। —এটটু অমনি পড়ে আছে মালাটার তলায়। —তবে আর কী? পানি দে—নামাজ করি। ইচু জল দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ওজু শেষ করে ফজরের নামাজে বসে গেল। এটি তার জীবনের অতিপ্রিয় কাজ বাল্যকাল থেকেই। মজুরি করতে না-যেতে পারে সে, কিন্তু নামাজ না-করে সে দিনের কাজ কখনো আরম্ভ করেনি। নিমি বললে—উঠেছ যখন, তখন জনে যাও। আজকাল যুদ্ধের বাজারি দশ আনা করে জন, অন্য সময় তিন আনা হত যে। হাঁড়িতে যদি চাল থাকতি দেখলে, তবে আর তুমি জনে যাবা না! ও ভালো না। ইচু বললে—নামাজের সময় ঘ্যান ঘ্যান করিসনে বাপু, একটু চুপ কর। নামাজ শেষ করে ইচু দা হাতে বেরিয়ে যেতে গিয়ে একটু থেমে বললে—খিদে পেয়েছে। কী আছেরে? —কিছু নেই। —দেখ না হাঁড়িটা—বড্ড খিদে পেয়েছিল। —দুটো-কটা পানি দেওয়া ভাত পড়ে আছে, আর কিছু নেই। —তাই দে। বেনবেলা না-খেয়ে গেলি দুপুরবেলা এমন খিদে পায়, দা ধরতি হাত কাঁপে। কাজ করতি পারিনে।
Golpokhuro App
Listen to Complete Audiobooks