Description: শ্রাবণ মাসের দিন, বর্ষার বিরাম নেই, এই বৃষ্টি আসছে এই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতে আউশ ধানের গোছা কালো হয়ে উঠেচে, ধানের শিষ দেখা দিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। পুঁটি সকালে উঠে একবার চারিদিকে চেয়ে দেখলে---চারিদিক মেঘে মেঘাচ্ছন্ন। হয়তো বা একটু পরে টিপ-টিপ বিষ্টি পড়তে শুরু ক’রে দেবে। আজ তার মনে একটা অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি, সেটাকে আনন্দও বলা যেতে পারে, ছদ্মবেশী বিষাদও বলা যায়। কি যে সেটা ঠিক ক’রে না যায় বোঝা , না যায় বোঝানো। আজ তার বিয়ের গায়ে- হলুদের দিন। এমন একটা দিন তার বারো বৎসরের ক্ষুদ্র জীবনে এইবার এই প্রথম এল। সকালে উঠতেই জেঠিমা বলেচে---ও পুঁটি, জলে ভিজে ভিজে কোথাও যেন যাস্ দিন; আর তিনটে দিন কোনওরকমে ভালোয় ভালোয় কেটে গেলে যে বাঁচি। আজ কি বার? মঙ্গলবার। শনিবার বুঝি বিয়ের দিন। পুঁটির মনে সত্যিই কেমন হয়, আনন্দের একটা ঢেউ যেন গলা পর্য্যন্ত উঠে আটকে গেল। বিয়ে বেশি দূরে কোথাও নয়, এই গ্রামেই, এমন কি এই পাড়াতেই। এক ঘর ব্রাহ্মণ আজ বছরখানেক হ’ল অন্য জায়গা থেকে উঠে এসেচেন এখানে, দুখানা বড় বড় মেটে ঘর বেঁধেছেন--- একখানা রান্নাঘর। এতদিন ধ’রে সে সঙ্গিনীদের সঙ্গে সেই বাড়ীতে কুল পাড়তে গিয়েচে, সত্যনারায়নের সিন্নি আনতে গিয়েচে, যখন পাড়ার প্রান্তের ঘন জঙ্গল কেটে ভদ্রলোক বাড়ী তৈরি করেন ঘাটে যাবার পথের একেবারে ডান ধারে, তখন কতবার ভেবেচে এই ঘন বনের মধ্যে বাড়ী ক’রে বাস করবার কার না জানি মাথাব্যাথা পড়ল।